রাকিব শান্ত, ব্যুরো প্রধান উত্তরবঙ্গঃ বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে ধর্ষণচেষ্টার মামলা না নিয়ে উল্টো তাকে ‘যৌনকর্মী’ হিসেবে আদালতে চালান দেওয়ার অভিযোগে শিবগঞ্জ থানার ওসি ও এক এসআই’র বিরুদ্ধে বগুড়ার আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই নারীর মা শিবগঞ্জ থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান এবং সদ্য বদলি হওয়া এসআই রতন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রোববার মামলা দায়ের করেছেন।
উক্ত মামলার ঘটনায় উভয়পক্ষের বক্তব্য ভিন্ন ভিন্ন হবার কারণে সুধীমহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কারণ উল্লেখ্য যে, শিবগঞ্জ থানার ওসি এস.এম বদিউজ্জামান গত নভেম্বর মাসে জেলা পুলিশের মাসিক সভায় বিশেষ পুরস্কার হিসেবে জেলায় সর্বোচ্চবার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি শিবগঞ্জ থানায় যোগদানের পূর্বে সদর থানায় কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক ও ছাত্রবান্ধব কাজে অংশগ্রহণ করে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ওসি আংকেল খ্যাতি পেয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ঘটনা গত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে। উক্ত মেয়েটির মা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, শিবগঞ্জ উপজেলার সিহালী ফকিরপাড়া গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে কলেজছাত্র রামিম হাসান ওরফে রিমনের সাথে বাদীর মেয়ের দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ ব্যাপারে জানার পরে পরিবার রাজি না থাকায় বাদী তার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেয়। অন্যদিকে বিয়ের পরও রিমন বাদীর মেয়ের সাথে ফোনে সম্পর্ক অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত মেয়েটির স্বামী বাড়িতে না থাকায় রিমন গত ২৪ নভেম্বর দুপুরে বাদীর মেয়ের বাড়িতে ঢোকে এবং তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।
এসময় মেয়েটির চিতকারে স্থানীয় এলাকাবাসী বাড়িতে ঢুকে রিমন ও বাদীর মেয়েকে আটক করে পুলিশকে খবর দেন। এরপর শিবগঞ্জ থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান ও এসআই রতন কুমার রায় দুজনকে আটক করে নিয়ে যান। মেয়েটির মায়ের অভিযোগ থানায় রিমনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা করতে চাইলে পুলিশ তা নেয়নি। পরে দুজনকে দণ্ডবিধির ২৯০ ধারায় মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়। পরে আদালত দুজনকে জামিনে ছেড়ে দেন।
মেয়েটির মা আরও অভিযোগ করেন, এসআই রতন কুমার তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরেও ধর্ষণচেষ্টার মামলা না নিয়ে উল্টো তাঁকে ‘যৌনকর্মী’ অপবাদ দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। চরিত্রবান হওয়া সত্ত্বেও ওসি এবং এসআই তাঁর মেয়েকে খারাপ চরিত্রের নারী সাজিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁর মেয়েকে গত ২৫ নভেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন আদালত থেকে তাঁর মেয়ে জামিনে ছাড়া পান। তিনি বলেন তার মেয়েকে যৌনকর্মী হিসেবে চালান দিয়ে তাদের সম্মান নষ্ট করেছেন। এ কারণে মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।
এদিকে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার অভিযোগ আমলে নিয়ে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ৭ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ওই নারী সাংবাদিকদের জানান, রামিম হাসান বিয়ের পর থেকে তাঁকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। সেদিনের ঘটনার পরে রামিম হাসানের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা দিতে গেলে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে রামিম হাসানকে রক্ষা করতে ধর্ষণচেষ্টার মামলা গ্রহণ করেনি। উল্টো পুলিশ তাঁকেই ‘খারাপ চরিত্রের মেয়ে’ সাজিয়ে আপত্তিকর ধারায় মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে তিনি লোকলজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারছেন না বলেও উল্লেখ্য করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, ওই নারীকে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় লোকজন আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। তিনি আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছেন। ওই নারীকে মারধর বা অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয় বলেও জানান তিনি।
অভিযুক্ত অপর এসআই রতন কুমার রায় গত ৬ ডিসেম্বর শিবগঞ্জ থানা থেকে বদলি হয়ে ডিএমপিতে যোগদান করেছেন। তিনি যোগদান করার এক সপ্তাহ পর তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। মুঠোফোনে চেষ্টা করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।